বর্তমান সময়ে দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনিয়মিত জীবনযাপন, বাহিরে বের হলে করা রোদ, ধুলো-বালির ফলে আমাদের শরীরে নানান ধরনের নেতিবাচক বা খারাপ প্রভাব দেখা যায়।
আর এ খারাপ প্রভাব থেকে আমাদের শরীরের পাশাপাশি চুল ও রেহাই পায় না।
আমরা অনেকেই ভুগে থাকি চুল পাতলা হয়ে যাওয়া,চুলে খুসকি হওয়া, চুলের গোড়া চুলকানো, অতিরিক্ত চুল পড়া কিংবা, অকালে চুল পেকে যাওয়ার মতো নানা অস্বস্তিকর সমস্যায় ।
এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে আদা হতে পারে কার্যকর ও ইফেক্টিভ একটি সমাধান ।
চুলের যত্নে আদা (chuler jotne ada ) আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আদা দিয়ে চুলের যত্ন ও উপকারিতার কথা ডা. ডিএম মহাজন বলেন:
“আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদানে ভরপুর ।
কারন আদা অমাদের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলে চুলের বৃদ্ধি বারাতে সাহায্য করে।”
আদায় থাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি জিঞ্জেরল নামক উপাদান ।
এই জিঞ্জেরল নামক উপাদান আমদের মাথার ত্বকের রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে থাকে ও মাখার ফলিকলে পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া, আদা এর জীবাণুনাশক গুণাবলি আমাদের মাথার খুশকি দূর করতে, মাথায় গুড়ি গুড়ি পিম্পল হওয়া, ও মাথার ত্বকের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধে, ও নতুন চুল গজাতে সহায়ক।
নিম্নে চুলে এর যত্নে আদার উপকারিতার কথা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
আদার মধ্যে কিছু উপকারী উপাদান আছে যা আমাদের চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
কারণ আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জিঞ্জেরল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
আর এই জিঞ্জেরল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলে।
এবং চুলের ফলিকল কে উদ্দীপিত বা উত্তেজিত করে তুলে, যার ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়।
আদায় থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও ফ্যাটি অ্যাসিড চুলকে স্বাস্থ্যবান, শক্ত ও মজবুত এবং আর্দ্র করে তুলতে সহায়তা করে।
প্রথমে আদা বেটে বা বেলেন্ডার করে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
পরে আদার সাথে অ্যালোভেরা, ডিম এবং লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। এবং খুব দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হয়।
আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
যা আমাদের চুলের খুশকির সমস্যা কমায় এবং মাথার ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সহায়তা করে।
চুলের খুশকি দূর করার সাথে সাথে আমাদের চুলের গোড়াকে মজবুত ও শক্ত করতেও সাহায্য করে আদা।
আদাকে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার বলা হয় । আদায় প্রাকৃতিক কন্ডিশনিং উপাদান রয়েছে।
আদার রস ব্যবহারের ফলে এটি আমাদের চুলকে অনেক নরম ও ঝলমলে করে তোলে।
ও চুল ধোয়ার পরে প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের চুল সাইন করে। এবং চুল গজাতে আদা খুবই এফেক্টিভ।
চুলের আগা ফাটা রোধ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে আদা।
চুলের আগা ফাটার সমস্যা থাকলে তাজা আদা নিতে হবে, সে আদার গুঁড়া পানিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
তারপর ভালো ভাবে পুরেঅ চুলে স্প্রে করে নিতে হবে। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এই পদ্ধতির নিয়মিত ব্যবহারের ফলে অনেক চুলের উপকার পাওয়া যায়।
আপনার চুল যদি ছোট হয় তাহলে আদা ‘লিভ-ইন কন্ডিশনার’ হিসেবে ও ইউজ করা যায় তাতে করে আরও ভালো ফল পাবেণ।
চুলের যত্নতে আদার ব্যবহারের কিছু সহজ উপায় ব্যাখ্যা করা হলো:
১) চুলে আদার রস দিলে কি হয়? আমাদের জন্য জানা দরকারি কারন আদার রস চুলের ও মুখের জন্য খুব উপকারি।
>) প্রথমে তারতাজা কিছু আদা নিতে হবে। তার পর তাজা আদার রস বের করে নিতে হবে।
এরপর আদার রসের সাথে জলপাই তেল (ওলিভ ওয়েল)বা নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে।
মিসানো হয়ে গেলে মাথার ত্বকে চুপচুপা করে লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন ৫-১০ মিনিট।
তারপর ২-৩ ঘন্টা বা তার ও বেশি সময় রেখে ধুয়েফেলুন।
ভালো ফল পেতে সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ বার এটি ব্যবহার করুন। চুলের অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
>) প্রথমে আদা বাটা নিতে হবে। আদা বাটা সাথে পেঁয়াজ বাটা, একটি ডিম, টক দই ও অ্যালোভেরা নিতে হবে।
সবগুলো উপাদান একসাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিতে হবে।
তারপর চুলে ভালো ভাবে মেখে লাগিয়ে নিতে হবে।
তার পর ১ ঘন্টা বা তার ও বেশি সময় রেখে ধুয়েফেলুন।
চুল পড়া বন্ধ তো হবেই সাথে ড্যামেজ চুল রিপেয়ার করতে সাহায্য করবে এই হেয়ার প্যাকটি।
চুল এর যত্নে আদার তেল খুবই কার্যকরী। দুটি পদ্ধতিতে আদার তেল বানানো যায়।
১) প্রথমে আদা থেকে আদার জুস বের করে নিতে হবে। তারপর নারকেল তেলের সাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিতে হবে।
যেহেতু পানির সাথে মিক্স করতে একটু কষ্ট হয়, কিন্তু তাড়াতাড়ি করে নারলে আস্তে আস্তে একটা ঘন পেস্টের মতো হয়ে যাবে, তখন সেটা এপ্লাই করতে হবে মাথার চুলে ।
এইটা খুবই উপকারী আমাদের চুলের জন্য। এটা সংরক্ষণ করা করে রাখা যাবে না সাথে সাথে এপ্লাই করাই ভালো।
২) প্রথমে পরিষ্কার করে আদা নিতে হবে পরে আদা গুলোকে ছোট ছোট করে পিস করে কুচিয়ে নিতে হবে।
পরে একটা পরিষ্কার পাতিল নিয়ে নিতে হবে এবং পাতিলের মধ্যে তেল দিয়ে দিতে হবে বেশি পরিমাণে এবং আদাকুচি গুলো দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে।
সেদ্ধ করার পরে যখন দেখতে পাবেন যে আদার রস পুরোপুরি তেলের সাথে মিশে গেছে এবং তেলের রংটা একটু লালচে টাইপ হয়ে গেছে। তখন তেলটাকে নামিয়ে নিতে হবে।
এরপরে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এই আদা তেলটা আপনি অনেকদিন সংগ্রহ করতে পারেন কাচের যারে।
মাথার ত্বকে আদার রসের ব্যবহার কতোটা উপকারি আমাদের জন্য। চুল গজানোর জন্য আদা তেল বাড়িতে ই বানিয়ে নিতে পারেন।
আদা নিয়মিত ব্যবহার করলে নতুন চুল গজায় ও চুল গজাতে সাহায্য করে। আদার রসের সাথে তেল যোগ বা আদার যে কোন মাক্স ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।
আর মাথার ত্বকের বাড়তি রক্ত চলাচলের কারণে চুলের গোড়ার ফলিকলে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায় । বাড়তি ফলিকল আমাদের চুল গজাতে সাহায্য করে।
অনেকে বলে চুলে আদার রস দিলে কি হয়? কথায় বলা যায় আদা আমাদের চুলের জন্য খুব উপকারী আমাদের চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
আদার রস ব্যবহার করে মাথায় সারারাত রাখা যাবে। তবে ব্যবহার পদ্ধতি একটু ভিন্ন, প্রথমে তেল নিতে হবে এবং তেলটা একটু গরম করে নিতে হবে।
তেলের সাথে আদার দুই চামচ আদার রশ নিতে হবে। ওটাকে ভালোভাবে মিক্স করতে হবে। তারপর সারা চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারবেন।
যেমন আদার উপকারিতা অনেক বেশি তেমনি আদার অপকারিতা ও রয়েছে কিছু।
চিকিৎসক ডা. মহাজন পরামর্শ মতে, চুলে আদা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া ভালে। কারণ:
কারণ সব জিনিসই তো সবার ত্বকে সুট করে না। আদা ও তার ব্যতিক্রম নয়। আদার ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
যেমন কিছু কিছু মানুষের ত্বকে আদা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে ।
অনেক সময় আদা ব্যাবহারে ফলে লালচে ভাব, জ্বালাভাব বা চুলকানি হয়ে থাকে। তবে সব মানুষের ক্ষেত্রে নয় যাদের ত্বকে এলার্জি সমস্যা এক্সট্রিম লেভেলের তাদের জন্য এমনটা হতে পারে।
অতিরিক্ত এলার্জি প্রবণ ত্বক বা অতি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য অতিরিক্ত আদা ব্যবহারে করা ঠীক নয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
প্রাকৃতিক উপায়ে আদা চুলের যত্নে একটি কার্যকরী উপায় ও উপাদান হতে পারে।
যদিও আদার ব্যবহারের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই তবুও এটি চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
আদা ব্যবহারের ফলে যদি কখনো কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকায় আলুর ভূমিকা অপরিসীম। আলুর কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে…
আলু একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর সবজি। আলুর উপকারিতা - alur upokarita , অসাধারণ গুনুগুন,…
লেবুর চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি, সহজ ও শক্তিশালী পানীয়। টি সাধারণ পানীয় হলেও…
সকালটা শুরু হয় এক কাপ গরম গরম চা দিয়ে। সকালে উঠে এক কাপ চা না…
আমরা অনেকেই ঠান্ডা বা গরম ও সকাল কিংবা সন্ধ্যায় যাই হোক না কেন এক কাপ…
আদা হলো প্রাকৃতিক এক মহৌষধ। প্রাচীনকাল থেকে লোকমুখে একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে সেটা হলো -সকল…