Health

মধুর উপকারিতা – Benefits of honey

মধু অত্যন্ত উপকারী প্রকৃতিক উপাদান। মধু আমাদের স্বাস্থ্যের দিক থেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করতে পারে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ও মানুষের বডির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে বুস্ট করতে সহায়তা করে। মধুর উপকারিতা অতুলনীয়।

মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান। মধু নিয়মিত খাওয়া এবং ব্যবহার করা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মধুটি অবশ্যই খাঁটি হতে হবে আর খাঁটি মধু আমাদের বডির জন্য খুবই উপকারী।

আমরা যদি নিয়মিত মধু খেয়ে থাকি তাহলে এটি আমাদের বডির জন্য অনেক ভালো কাজ করে।

আমরা যদি আমাদের রেগুলার বা দৈনন্দিন জীবনে মধুর ব্যাবহা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। তাহলে আমরা সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন এর দিকে ১ধাপ এগিয়ে যাব ।

কারন মধুর পুষ্টিগুণ ও স্বাদ বিবেচনা করি তাহলে মধু খাবার তালিকায় স্থান খুবই উপরে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্ট।

অত্যন্ত উপকারী মধু আমাদের বডির জন্য। ও প্রতিদিন বা নিয়মিত আমরা যদি মধু খেতে পারি।

তাহলে এটি আমাদের অনেক ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে। এটি চিকিৎসক বা বৈজ্ঞানিক ধারা প্রমাণিত।

মধুর পুষ্টিগুণ কি – What are the nutritional benefits of honey?

মধুর গুনাগুন কি, মধুর পুষ্টি উপাদান কী সেটা আমাদের অনেকের অজানা?

মধু এর মধ্যে প্রায় ৪৫টি পুষ্টিকর ও খাদ্য এর উপাদান রয়েছে বা থাকে ।

ফুলের মধুতে বা ফুলের পরাগে এর মধুতে গ্লুকোজ সাধারণত ২৫ থেকে ৩৭ ভাগ বা শতাংশ থাকে। ফ্রুক্টোজ থাকে ৩৪ থেকে ৪৩ ভাগ, অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে ২২ ভাগ।

খনিজ লবণ থাকে ২৮ ভাগ, এনজাইম থাকে ১১ ভাগ, মধুতে কোন প্রকার প্রোটিন বা চর্বি থাকে না। ১০০ গ্রাম মধুতে প্রায় ২৮৮ ক্যালরি শক্তি বা খাদ্য শক্তি থাকে।

, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ। এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশ ম্যানটোজ পাওয়া যায়।

এছাড়া, এতে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশ এনজাইম থাকে।

মধুর মধ্যে কোনো চর্বি বা প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি বা শর্করা শক্তি।

মধুর পুষ্টিগত উপাদানসমূহের মধ্যে রয়েছে:

১) শক্তি – ক্যালরি বা শর্করা – ৩০৪ ক্যালর

২) মধুতে শর্করা থাকে – ৮২.৪ গ্রাম – যা সাধারনত গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ

৩) মধুতে প্রোটিন থাকে না বললে চলে, খুবই কম না থাকার মতো – ০.৩ গ্রাম

৪) মধুতে চর্বি থাকে না – ০ গ্রাম

৫) মধুতে ফাইবার থাকে – ০.২ গ্রাম

৬) মধুতে পানি থাকে – ১৭.১ গ্রাম

৭) মধুতে ভিটামিন সি থাকে – ০.৫ মিলিগ্রাম

৮) মধুতে বি-ভিটামিন – বি৬, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন থাকে – খুব অল্প পরিমাণ

৯) মধুতে পটাশিয়াম থাকে – ৫২ মিলিগ্রাম

১০) মধুতে ক্যালসিয়াম থাকে – ৬ মিলিগ্রাম

১১) মধুতে ফসফরাস থাকে – ৪ মিলিগ্রাম

১২) মধুতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে – ২ মিলিগ্রাম

১৩) মধুতে আয়রন থাকে – ০.৪২ মিলিগ্রাম

মধু প্রাকৃতিক শক্তি উৎস যা আমাদেব বডি বা শরীরের জন্য খুব উপকারী উপাদান ।

মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা কী? – Advantages and disadvantages of honey:

মধু অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। মধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী নিয়মিত মধু খাওয়ার ফলে । আমরা অনেক ধরনের রোগ বালাই থেকে মুক্তি পেতে।

নিম্নে মধু এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে লেখা হলো :

মধু এর উপকারিতা – Benefits of honey:

আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী মধু । এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মধু খাওয়ার উপকারিতা অনেক। মধু আমাদের স্বাস্থ্যকে আরো উন্নত করতে সহায়তা করে। নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১) মধু শক্তি প্রদানকারী – Honey is energizing:

মধু একটি শক্তি প্রদানকারী খাবার । মধু আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রাকৃতিক উপাদান এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী । মধু উৎকৃষ্ট শক্তি প্রদানকারী খাদ্য যা খাদ্য তালিকার অনেক উপরে অবস্থিত ।

মধু অসাধারণ একটি উৎস তাপ ও শক্তির জন্য। মধু আমাদের শরীরে তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে থাকে।  ফলে আমাদের দেহ সতেজ এবং সুস্থ থাকে।

২) মধু হজমে সহায়ক – Honey is helpful in digestion :

মধু ও হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মধুর মধ্যে শর্করা থাকে। এই মধুর মধ্যে থাকা শর্করা সহজেই হজম হয়ে যায়। কারণ মধুর মধ্যে উপস্থিত থাকে ডেক্সট্রিন ।

আর এই ডেক্সট্রিন সরাসরি রক্তের মধ্যে প্রবেশ করে এবং দ্রুত গতিতে কাজ শুরু করে।

পেটের নানা ধরনের সমস্যা ও হজম জনিত সমস্যাতে আক্রান্ত মানুষদের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী এবং সুবিধাময়।

মধু পেটকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়তা করে। আমাদের হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে।

৩) মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে – Honey relieves constipation :

মধু আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। কারণ মধুর মধ্যে থাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।

আর এই মধুর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সই কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়াদূর করতে বা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

তাই নিয়মিত প্রতিদিন সকালে এক চামচ করে মধু খেলে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারি। মধু আমাদের অম্ল বা গ্যাস্ট্রিক কমাতেও সহায়তা করে।

৪) রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে মধু – Honey to prevent anemia :

মধু আমাদের দেহে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। কারণ মধুর মধ্যে এমন কিছু উপকারী উপাদান আছে যা আমাদের হিমোগ্লোবিনকে নতুন করে গঠন করতে সহায়তা করে।

যেসব রোগীদের রক্তশূন্যতা আছে তাদেরকে ডক্টর মধু খাওয়ার জন্য বলে।

কারণ মধুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। আর এই উপাদানগুলো আমাদের রক্তের মান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

তাই যাদের শরীরে রক্তের অভাব আছে তাদের নিয়মিত মধু খাওয়া উচিত।

৫) মধু ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে সহায়ক – Honey is helpful in curing all lung diseases and respiratory problems:

মধু ফুসফুসের যাবতীয় রোগবেদি নিরাময় করতে সহায়তা করে। এবং মধুর শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে এবং নিরাময় করতেও সহায়তা করে।

মধু এজমা রোগীদের জন্য অনেক উপকারী মধু এজমা বা শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে। যদি কোন অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং তখন যদি মধু নাকের কাছে ধরে শ্বাস নিতে নেওয়া হয় তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়।

এবং কিছুক্ষণ পর সে তার শ্বাস-প্রশ্বাস সুন্দরভাবে নরমাল হয়ে যাবে। পুরনো দিনের মানুষ আগে বলতো যে শ্বাসকষ্ট রোগীর জন্য এক বছরের পুরনো মধু বেশি উপকারী।

৬) ঘুম কম হওয়া বা অনিদ্রা – Lack of sleep or insomnia:

অনিদ্রা বা ঘুম কম হওয়া বা ঘুম না আসার মহা ঔষধ হচ্ছে মধু। মধু ঘুমের জন্য অনেক ভালো কাজ করে।

আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা থেকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত মধু সেবন করতে হবে।

প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস পানিতে, দুই চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন এতে করে আপনার রাতে খুব ভালো ঘুম হবে।

৭) ডিপ্রেশন কমাতে মধু – Honey to reduce depression:

মধু অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত মধু সেবনের ফলে আপনার ভালো ঘুম হবে আর ঘুম ডিপ্রেশন কমানোর জন্য অতি জরুরী।

৮) যৌন দুর্বলতা কমায় মধু – Honey reduces sexual weakness:

মধু ও যৌন দুর্বলতা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সেক্সে মধু খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

অনেক পুরুষের যৌন দুর্বলতা থেকে থাকে বা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খেতে পারে তাদের শক্তি বাড়বে এবং যৌন শক্তি বেরে যাবে অনেক গুন।

৯) মধু একটি প্রশান্তময় পানীয় – Honey is a soothing drink :

হালকা গরম পানি বা হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশ্রিত করে খেলে সেটা প্রশান্তিময় পানীয় বলে ধরা হয়।

এমনকি গরমকালে অতিরিক্ত গরমের সময় আপনি যদি ঠান্ডা পানির সাথে মধু মিশিয়ে খান সেও আপনার বডির জন্য অনেক উপকারী।

১০) মধু মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষা করে – Honey protects oral health:

মধু মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এবং মুখের স্বাস্থ্য উন্নতি করতেও সাহায্য করে মধু।

নিয়মিত দাঁতের উপর মধু  ব্যবহার করা হলে দাঁতের ক্ষয় করে ও ক্ষয় প্রতিরোধ করে, দাঁতে পাথর জমা হতে বাধা দেয়, দাঁত দ্রুত পড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া আস্তে আস্তে ধীর হয়।

মাড়ির স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতেও সহায়তা করেমধু। মধু মুখে রক্তনালীকে সম্প্রসারিত করতেও সহায়তা করে।

আমাদের মুখে অনেক সময় ঘা হয় এবং গর্ত হয়ে যায় মধু হয়ে ঘা ও গর্ত ভরাট করতেও সহায়তা করে।

মুখে ঘা বা গর্তের ফলে অনেক সময় সাদা সাউথ জমে মধু সেই ফুট জমাকে উঠাতে সহায়তা করে।

১১)পাকস্থলীর সুস্থতায় মধু – Honey for stomach health :

এমন একটি উপাদান যেটা পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

পাকস্থলীকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে এবং হজমের প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে মধু্।

মধু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে। এসিডিটি কমাতে বা অ্যাসিডের পরিমাণ সাহায্য করে।

এবং মধু আমাদের অরুচি, বমিভাব এবং বুকজ্বালা দূর করতে ও কমাতে সাহায্য করে।

১২) তাপ উৎপাদন ও তাপের উৎস মধু – Heat production and heat source honey:

তাপ উৎপাদনে মধু অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
শরীরকে গরম রাখতে মধু বেশ কার্যকরী।

শীতের ঠান্ডায় নিয়মিত মধু খেলে গা গরম থাকে। দুই বা তিন চা-চামচ মধু এক কাপে বা গ্লাসে নিয়ে নিতে হবে।
তার পর ফুটানো গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে বা খেতে পারলে রোজ আপনার শরীর সতেজ এবং উজ্জ্বল থাকবে।

১৩)পানিশূন্যতায় মধু – Honey for dehydration :

পানি শূন্যতায় মধু অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় আমাদের বডিতে পানি শূন্যতা দেখা দেয় বিশেষ করে ডায়রিয়া হলে মানুষের দেহে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।

আর এই পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণ করতে পারে মধু।

ডায়রিয়া হলে বা হয়ে থাকলে শরীরের পানির ঘাটতি নিরাময়ের জন্য এক লিটার পানির সাথে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে নিতে হবে ।

তারপর পানি মধুর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে শরীরে পানিশূন্যতা অনেক আংশে দূর করা সম্ভব।

১৪)দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে মধু – Honey to increase eyesight :

চোখের জন্য বা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখায় মধু খুব উপকারী। গাজর নিয়ে গাজরের রস বের করে নিতে হবে।

আর এই গাজরের রসের সাথে নিয়মিত মধু মিশিয়ে খেতে পারলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো যায় এবং চোখ ভালো থাকে।

১৫)রূপচর্চায় মধু – Honey in cosmetics:

সেই প্রাচীনকাল থেকে রূপচর্চায় মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। রূপচর্চার ক্ষেত্রে মধু অনেক জনপ্রিয় এবং খুব উপকারী।

আমাদের মুখের ত্বককে সুনদর, মসৃণ এবং কোমল করতে সাহায্য করে থাকে মধু।

বিশেষ করে মেয়েরা ত্বকের যত্নে মধু বেশি ব্যবহার করে থাকে ছেলেরাও করে কিন্তু কম।

মধু দিয়ে নানা রকম মাক্স বানিয়ে ব্যবহার করা যায় ঘরোয়া পদ্ধতিতে। আপনার ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা হবে।

১৬)ওজন কমাতে সহায়ক মধু – Honey helps in weight loss :

ওজন কমাতে মধু অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ মধুর মধ্যে কোন প্রকার চর্বি নেই।

এবং মধুর মধ্যে থাকা উপাদান গুলো আমাদের পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

মধু আমাদের শরীরের তেল চর্বি কমাতে এবং তেল চর্বি কাটাতে সাহায্য করে।

এর ফলে আমাদের শরীরের ওজন অনেকাংশী কমে যায়।

১৭) হজমের সহায়ক মধু – Digestive honey :

মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান এটি আমাদের পেটে খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় এটি স্বাদ মিষ্টি।

মধু প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হয়ে থাকে। মধুর সাথে ফল মিশিয়ে খেলে সেটাও অনেক ভালো কাজ করে হজমের জন্য।

তাই এটি সহজে হজম হয় যায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে থাকে।

মধু আমাদের পেটের অস্বস্তি, অস্থিরতা, অম্ল বা গ্যাস, এবং পীড়া কমাতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

১৮) গলার স্বর বা গলা ভালো রাখতে মধু – Honey to keep your voice or throat healthy:

মধু আমাদের গলাকে এবং গলার স্বরকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে ।গলার স্বর মধুর মতো করতে মধু খাওয়ানো হয়। এবং গলাকে সুস্থ রাখতে ও মধু খাওয়ানো হয়।

আমাদের গলায় খুসখুস কাশি বা জ্বালাপোড়া হলে মধু গরম পানি বা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

কারণ মধু গলার শ্লেষ্মা কমাতে সাহায্য করে এবং গলার স্বরকে পরিষ্কার করে ও সুন্দর করে।

১৯) তারুণ্য বজায় রাখতে মধু – Honey to maintain youth :

মধুর মধ্যে থাকে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই মধুর মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্টই আমাদের ত্বককে সুস্থ,সুন্দর এবং যুবতী রাখতে সাহায্য করে।

মধু আমাদের ত্বকের বয়সজনিত ভাঁজ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এবং মধু ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে ও আরও ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

এর নিয়মিত খেলে বা ব্যবহারে ফলে আপনার শরীরের শক্তি ও তারুণ্য আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে ।

২০) হাড় ও দাঁত গঠনে মধু – Honey for bone and tooth formation:

দাঁত ও হাড়ের গঠনে মধু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পাশাপাশি মধুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও থাকে। আমরা জানি যে ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

মধুর মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠন ও শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। মধু আমাদের দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখতে ও করতে সাহায্য করে এবং নখের ঔজ্জ্বল্যও বৃদ্ধি করতে বা বারাতে সহায়তা করে মধু।

২১) আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময়ে মধু – Honey to cure dysentery and stomach aches:

মধু আমাদের পুরোনো আমাশয় রোধ করতে পারে। এবং মধু আমাদের পেটের যাবতিয় পীড়া ও অন্যান্য হজম সমস্যা নিরাময় করতে অতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

মধু পেটের রোগ ব্যাধি প্রতিরোধক গুণে গুণান্বিত। যা আমাদের পেটের সাধারণ সমস্যা গুলো দূর করতে সহায়তা করে।

২২) হাঁপানি রোধে সহায়ক মধু – Honey helps prevent asthma :

হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে মধু অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।

শ্বাসকষ্টের বা হাঁপানির সমস্যা থাকলে, গুঁড়ো গোলমরিচ, মধু এবং আদার মিশ্রণ বানিয়ে নিয়মিত খেলে হাঁপানি রোধ হয় এবং শ্বাসকষ্টে আরাম পাওয়া যায় ।

কারন মধুর এই মিশ্রণটি শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে সাহায্য করে।

২৩) উচ্চ রক্তচাপ কমায় মধু – Honey reduces high blood pressure:

মধু মানবদেহের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে । মধু এবং রসুনের রস একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে ।

মিশিয়ে নেবার পর মিশ্রনটি খেলে উচ্চ রক্তচাপ অনেক আংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ।

সকালে এবং সন্ধ্যায় মধু এবং রসুনের এই মিশ্রণটি খেতে হবে। নিয়মিত খেলে রক্তচাপ কমে যায়। এবং এ ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা অনেক গুন বেরে যায় বা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

২৪) রক্ত পরিষ্কারক মধু – Blood purifier honey :

মধু আমাদের দেহের রক্তকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। এবং এই মিশ্রণটি রেগুলার খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়।

কারন এটি আমাদের শরীরের যে রক্তনালি থাকে সেই রক্তনালিকাগুলোকেও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।, যা আমাদের দেহের সুস্থ রক্তসঞ্চালনে জন্য সহায়তা করে।

২৫) রক্ত উৎপাদনে সহায়ক মধু – Honey helps in blood production :

মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং অনন্য গুনে ভরপুর । মধুর মধ্যে আয়রন নামক এ কি উপাদান আছে।

আরে মধুর মধ্যে থাকা আয়রন উপাদানটি আমাদের রক্তের মধ্যের উপাদানগুলি যেমন আরবিসি, ডব্লিউবিসি এবং প্লাটিলেটের কার্যকারিতা অনেক গুন বারিয়ে দেয়।

তাই এটি আমাদের শরিরের রক্ত উৎপাদন বাড়ায় ও শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।

২৬) হৃদ্রোগে সহায়ক মধু – Honey helps in heart disease:

হৃদ রোগের মতন বড় ধরনের রোগ সারাতেও সহায়তা করে মধু । মধু এবং মৌরি গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়মিত খেলে হৃদ্রোগের সহায়ক হয়। কারন মধু এবং মৌরি গুরোর মিশ্রণ হৃদ্রোগের জন্য খুব উপকারী।

এটি আমাদের হৃৎপেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে বা বারাতে সাহায্য করে। এবং হৃদয়ের কার্যক্ষমতা ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।

২৭) রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় মধু – Honey boosts immunity:

মধু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ।

মধুর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

মধুর মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদানা থাকে যা আমাদের শরীরকে নানা ধরনের রোগ দিয়ে আসতে বাধা দেয়।

আর এই মধুর মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান শরীরের ভেতর এবং বাইরের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ রোগ আমাদের শরিরে আসা থেকে বাধা দেয়।

২৮) ত্বকের উজ্জ্বলতায় মধু – Honey for skin radiance:

মধু আমাদের ত্বক বা স্কিনের জন্য খুবই উপকারী। মধুর মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের উপাদান যা আমাদের বডিতে গিয়ে আমাদের ত্বকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

মধু যদি নিয়মিত সেবন করা যায় তাহলে আমাদের ত্বক অনেক উজ্জ্বল এবং ফর্সা হয়। আমাদের ত্বকের নানা ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারে মধু।

২৯) প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক মধু – Natural antiseptic honey:

মধু আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রাকৃতিক উপাদান। মধুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক গুণাবলী আছে যেটা আমাদের শরীরে অনেক ধরনের রোগ ব্যাধি সারাতে সহায়তা করে এবং আসতে প্রতিরোধ করে।

তাই প্রাচীনকাল থেকে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে এবং বর্তমান যুগে মধুকে প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক হিসেবে ধরা হয়।

আমাদের ত্বকে শরীরের ভিতরে এবং বাইরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতে মধু সহায়তা করে।

শরীরের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন এবং ত্বকের সমস্যা ও সারাতে পারে মধু।

মানুষের স্বাস্থ্য চিকিৎসায় মধু অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে। আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান।

৩০) সর্দি কাশি নিরাময়ে মধু – Honey to cure cold and cough:

মধু অনন্য গুণে গুণান্বিত একটি উপাদান। শীতকাল আসলে বাস সাইনোসাইটিসের যাদের সমস্যা আছে তাদের জন্য মধু খুব উপকারী।

গরম পানি বা উষ্ণ গরম পানির সাথে যদি মধু মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে সর্দি কাশি হাঁপানির মতো বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে খুব সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

অনেক বেশি সর্দি কাশির সমস্যা আছে তারা গরম দুধের সাথে বা গরম পানির সাথে দু চামচ মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশিতে অনেক আরাম পাওয়া যায়।

মধুর অপকারিতা – The harm of honey :

মধু খাওয়ার উপকারিতা যেমন আছেও তেমনি মধু খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। কারণ মধুর মধ্যে শর্করা কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি রয়েছে।

আর মধুর মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট আমাদের দেহে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

আমরা যেমন জানি মধু ডায়াবেটিস কমাতে সহায়তা করে তেমনি অনেক সময় অতিরিক্ত মধুর খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস অনেকাংশে বেড়ে যেতে পারে কারণ মধুর মধ্যে অনেক পরিমাণ চিনি থাকে।

আবার মধু খেলে অনেক সময় গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যায়।

সতর্কতা – warning:

মধুর এই বিভিন্ন উপকারিতা নিয়মিত ব্যবহারে পাওয়া যায় অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি। তবে উপকারিতা আছে বলেই অতিরিক্ত খেতে হবে এমন নয় ।

যদি মধু খাওয়ার ফলে আপনার দেহে কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মধু খেতে হবে।

 

Shamira

Recent Posts

ত্বকের যত্নে লেবু – Lemon for skin care

লেবু তার অসংখ্য গুণে গুনাবলির জন্য অন্যতম ।ত্বকের যত্নে লেবু অনেক উপকারী ।লেবুর মধ্যে থাকা…

2 months ago

লেবুর উপকারিতা – Benefits of Lemon

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের লেবু একটি অপরিহার্য উপাদান ও অংশ।লেবু সাধারণত অন্যান্য খাবারের সাথে  বেশি ব্যবহার…

2 months ago

ত্বকের যত্নে নিম – Neem in skin care

ত্বকের যত্নে নিমপাতা এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশী সবাই জানি । কারণ ছোটবেলায় দিদার…

2 months ago

নিম পাতার উপকারিতা – Benefits of Neem Leaves

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকে নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম পাতার উপকারিতা র (nim patar…

2 months ago

ত্বকের যত্নে হলুদ – Turmeric in skin care

প্রাচীন আমল হতেই রূপচর্চায় ও ত্বককে সুন্দর করার জন্য হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে।প্রাচীনকালের মেয়েরা নিজেদের…

2 months ago

হলুদের উপকারিতা-Benefits of Turmeric

প্রাচীন আয়ুর্বেদে  হলুদকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ এটি  শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, জীবাণুনাশ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ।…

2 months ago