আদা হলো প্রাকৃতিক এক মহৌষধ। প্রাচীনকাল থেকে লোকমুখে একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে সেটা হলো -সকল রোগ নিরাময়ে দাদা হলো আদা।
বাস্তবতার ছোঁয়া রয়েছে এই কথাটির কারন আদার উপকারিতা অনেক।
আদা আমাদের শরীরের নানান ধরনের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে সক্ষম।
আদা সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী।
বিশেষ করে শিশুদের জন্য আদা খুবই উপকারী। আদার সাথে মধু ও উষ্ণ জল মিশিয়ে খাওয়া বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
শুধু বাচ্চাদের জন্য উপকারী নয় বড়দের জন্য অনেক উপকারী আদা।
নিচে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যার কথা তুলে ধরা হলো, যেখানে আদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে:
আদার মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে – What are the nutritional benefits of ginger?
আদা আমাদের শরীরের নানান ধরনের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে বিশেষ সক্ষম।
কারন আদার মধ্যে রয়েছে আদায় প্রোটিন ,ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস,
, আয়রন, , সোডিয়াম, , জিঙ্ক, শ্বেতসার ,আঁশ ,খনিজ পদার্থ,ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন A, B6, E ও C,
অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি উপাদান, ও পানি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর।
আদার পুষ্টি উপাদান ও আদার পুষ্টিগুণ অনেক।
প্রতি ১০০ গ্রাম আদায় পাওয়া যায় উপাদান গুলো –
কোলেস্টেরল – ০ মিলিগ্রাম, ক্যালরি – ৭৯ কিলোক্যালরি, শর্করা – ১৮ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম – ১৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন – ১.৮ গ্রাম, পটাশিয়াম – ৪১৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম – ১৩ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ০.৬ মিলিগ্রাম, লিপিড – ০.৮ গ্রাম, চর্বি – ০.২ গ্রাম, খাদ্য আঁশ – ২ গ্রাম, চিনি- ১.৭ গ্রাম,
ভিটামিন সি- ৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ – ০.২ মিলিগ্রাম. আদা খাওয়ার উপকারিতা অবিশ্বাস্য।
নিম্নে আদার উপকারিতার কথা বর্ণনা করা হলো:
১. আমাশয়, পেটফাঁপা, পেটব্যথা নিরাময়ে আদা:
আদার রস আমাদের বডির জন্য খুবই উপকারী এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে খুব সহজে আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারে প্রাকৃতিক উপায়ে।
আমাশয়, পেটফাঁপা, পেটব্যথা মতন রোগ ও সহজে সারাতে পারে আদা।
এক বা দু কাপ গরম পানিতে এক চা–চামচ আদার রস মিশিয়ে খাওয়ার পর পান করলে পেটের নানা সমস্যা উপশম হয়ে থাকে।
যারা দীর্ঘ অনেক দিন ধরে এই ধরনের নানান পেটের সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবশ্যই আদা, লেবু ও মধু একসাথে গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুইবার খাবেন খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
২. গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমে সমস্যা রোধে আদা:
গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমে সমস্যা সমাধান করতে পারে আদা। আদার রস খুবই উপকারী আমাদের শরীরের জন্য।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আছে তাদের আদার রস রেগুলার খাওয়া উচিত।
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অতিরিক্ত তারা প্রথম ৭ দিন আদার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ৬-৭ বার খাবেন।
এরপর প্রতিদিন দু’বার লেবুর রস ও মধু সহকারে আদার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়।
এছাড়া হজমের সমস্যা ও দূর করতে সাহায্য করে আদার রস। পেটের বদহজমের সমস্যা ও দূর করে।
এছাড়াও মনে রাখতে হবে যে আমরা খাবার ঠিকমতন না খাওয়ার কারণেই আমাদের গ্যাসের প্রবলেম বেশি হয়ে থাকে তাই খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে ।
৩. হাঁপানি ও ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে আদা:
শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসে সংক্রান্ত সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ২বার আদা, লেবু ও মধুর মিশ্রণ গরম পানিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে পান করতে হবে।
তার পর এভাবে টানা 10 থেকে 15 দিন খাবেন।
১৫ দিনের মধ্যে আপনি পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। অনেকটা আরাম বোধ করবেন ।
তবে ঠান্ডাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কিছুটা।
৪. অস্থিসন্ধির ব্যথা (আর্থ্রাইটিস) রোধে আদা:
অস্থিসন্ধির ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস রোধে আদা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কঠিন রোগের ক্ষেত্রে আদা অনেক উপকারী।
প্রতিদিন যদি দু বা তিন বার করে আদা, লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করা যায় তাহলে ব্যথা অনেক হ্রাস পায়।
এছাড়া পানীয় বেশি পরিমাণে পান করতে হবে এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারও খেতে হবে।
৫. হৃদ্রোগ ও আরাম দেয় আদা:
যাদের হৃদ্রোগ সমস্যা আছে কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ নেই তাদের জন্য আদা আরাম দায়ক হয়ে থাকে।
হৃদ্রোগ যাদের আছে তারা নিয়মিত বা প্রতিদিন দুই বার করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে কিছুটা আরাম বোধ করবেন।
গ্যাসজনিত সমস্যা থাকলে সেটা ও ধিরে ধিরে কম হবে।
৬. জ্বর ও বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে আদা:
জ্বর জ্বর অনুভব হলে বা জ্বর অনুভূতি হলে আদা তার জন্য ভালো কাজ করে।
জ্বরের রোগীকে আদা দিয়ে গরম পানি বা গরম লিকার চা দিয়ে খাওয়ানো হয় তাহলে সেটা খুবই উপকারী জ্বর অনেকটা নেমে যায়।
আর যদি বমি ভাব বা বমি হয় তাহলে আদা যদি নাকের কাছে ধরা হয় তাহলে বমি অনেকটা কম অনুভব হয় ।
তাছাড়া দিনে কয়েকবার আদার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে ভালো উপশম পাওয়া যায়।
৭. মাইগ্রেন, সাইনাস ও মাথাব্যথা ইনস্ট্যান্ট রোধ করতে সাহায্য করে আদা:
যাদের মাথা ব্যথার সমস্যা আছে মাইগ্রেনের সমস্যা আছে সাইনাসের সমস্যা আছে তাদের জন্য আদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যখন প্রচন্ড মাথা ধরে যায় তখন যদি আপনি তাৎক্ষণিকভাবে আদা লবণ দিয়েছি পান তাহলে একটু সময় পরে তাহলে আপনার আরাম অনুভব হবে মাথা ব্যথা কম অনুভব হবে।
দীর্ঘমেয়াদে উপশম বা আরাম পেতে চান যদি তাহলে আদা, লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন প্রতিদিন দু’বার।
৮. ক্ষুধা ও হজমবারায় আদা:
ক্ষুধা ও হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে আদা।
অনেক সময় আমাদের পেটে ক্ষুধা লাগে না, পেট ভরা ভরা অনুভব, ও খাবার খেলে সহজে হজম হতে চায় না, তাদের জন্য আদা অত্যন্ত উপকারী।
আপনি যদি কাঁচা আদা লবণ দিয়ে চিবিয়ে খান তাহলে ক্ষুধা বাড়ে এবং হজম ভালো হয়। কাঁচা আদা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
৯. কাশি ও কফ দূর করতে সাহায্য করে আদা:
কাশি ও কফ দূর করতে আদা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
যখন আমাদের ঠান্ডা লাগে বা নাক থেকে পানি পড়ে বা হাঁচি কাশি হয় সর্দি কাশি হয় তার সেই সময় যদি আমরা আদা গরম পানিতে মিশিয়ে তার সাথে লবঙ্গ এলআইসি দারচিনি দিয়ে খায় তাহলে সেটা আমাদের জন্য খুবই উপকারী ঠান্ডা অনেকাংশেই চলে যায়।
তাছাড়া কফ ও কাশি হলে গলা ব্যথা হলে আদা যে আমরা তাদের জন্য কতটা উপকারী সেটা আমরা প্রাচীন আমল থেকেই জানি।
কফ কাশির জন্য আদা চা বা আদা দিয়ে গরম পানি খুবই উপকারী।
১০. পাকস্থলী ও লিভার শক্তিশালী করে
আদার গুঁড়া, মধু ও আমলকীর গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে দিনে তিনবার চায়ের মতো গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে পাকস্থলী ও লিভার শক্তিশালী হয় ও ভালো কাজ করে।
১১. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
আদা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
রোজ দু থেকে তিনবার আদা মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এটা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
তবে অনেকে ডায়াবেটিস আছে সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মধু খাবেন না হলে মধুটা স্কিপ করবেন।
আদা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ :
আদা যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং আমরা অনেকেই আদা খাই এবং আদা ব্যবহার করি।
সে ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং আদার খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। আদা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জানা জরুরী।
রোজ আমাদের বডিতে আদা খাওয়ার সর্বোচ্চ মাত্রার দৈনিক ডোজ হলো : ১৫ গ্রাম রস ।
এছাড়া আমরা আদার রস বেশিরভাগ সময় মধু দিয়ে খাই যেহেতু যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে মধু এত খাওয়া যাবে কিনা যদি ডাক্তার নিষেধ করে তাহলে অবশ্যই মধু স্কিপ করে খাবেন ।
কারণ অনেক সময় মধুর কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
খেতে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা আদার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে উপকার বেশি হয়।
তারপরে আদা সরাসরি খাওয়ার ক্ষেত্রে আদাপি সে বেশি দিন রেখে দিবেন না, কারণ তাহলে আদার মধ্যে থাকা ঔষধি গুন নষ্ট হয়ে যায়।
সতর্কতা:
আদা আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে আমাদের জন্য অনেক উপকারী আদা।
তাছাড়া রান্নাবান্না করার বাদে ও আদার রস আমরা যদি নিয়মিত খাই তাহলে আমাদের বডিতে অনেক ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে আমরা মুক্তি পাব।
Leave a Reply