কলাকে আদর্শ ফল বলা হয় কারণ কলার মধ্যে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। কলা পৃথিবীর অন্যতম সহজলভ্য ও জনপ্রিয় ফল বলা যায়। কলার উপকারিতা অনেক।
দামে কম মানে ভালো এমন কোন ফলের কথা যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় সবার আগে আসবে কলার নাম।
কলা শুধু স্বাদের দিক থেকে সুস্বাদু ও পুষ্টি করই নয় এই কলার দাম ও কম এবং সারা বছরই পাওয়া যায়।
কলায় মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহো নানা ধরনের উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা, কার্যক্ষমতা ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কলা খাওয়ার উপকারিতা এক অসাধারণ স্থান দখল করে আছে ।তাই আমাদের প্রতিদিন খাদ্যাভ্যাসে কলা রাখা জরুরী।
কলার মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে? – What nutrients are in bananas?
কলা হলো নানা পুষ্টিতে পরিপূর্ণ একটি ফল। কলা এমন একটি ফল যার পুষ্টিগুণের কারণে মানুষের বডিতে ইমিউনিটি বুস্ট হয়।
কলায় রয়েছে – উচ্চতর ফাইবার – উচ্চ ক্যালরি এবং পটাশিয়াম, শর্করা, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবন: যা আমাদের শরীরের টিস্যু গঠন ও ক্ষয় পূরণ করতে সাহায্য করে।
রয়েছে উচ্চ ক্যালরি ।একটি মাঝারি-বড় কলা থেকে প্রায় ১০০ গ্যাম ক্যালরি বা তার বেশি ক্যালরি পাওয়া যায়।
একটি কলার খাওয়ার ফলে ঝটপট আপনার শরীরে এনার্জি চলে আসে।
কলায় রয়েছে সহজে হজম যোগ্য শর্করা যা আমাদের পেটের তাড়াতাড়ি ডাইজেস্ট হয় শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে ।
কলার পুষ্টিগুণ ও কলার গুনাগুন অনেক যা আমাদের বডির জন্য অনেক উপকারি।
পটাশিয়াম : কলার মধ্যে রয়েছে ভরপুর পটাশিয়াম।
আর কলার মধ্যে থাকা এই পটাশিয়াম আমাদের দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
এবং এই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ফলে আমাদের দেহে স্ট্রোকের মতন বড় ঝুঁকিও হ্রাস করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করলে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে পারে।
মাত্র একটি কলা প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম সরবরাহ বা প্রদান করতে পারে।
কলায় থাকা আয়রন: করা্র মধ্যে থাকা আয়রন আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠন করতে সাহায্য করে।
এবং কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করে, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও ধারন শক্তি বাড়ায়।
ছোট শিশুদের ও বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশেও এই ফল অত্যন্ত সহায়ক।
প্রতি ১০০ গ্রাম কলার খাদ্যগুণ নিম্নে বর্ণনা করা হলো বিস্তারিতভাবে :
উপাদান পরিমান
১) জল ৭০.১%
২)আমিষ ১.২%
৩)ফ্যাট (চর্বি) ০.৩%
৪)খনিজ লবণ ০.৮%
৫)ক্যালসিয়াম ৮৫মি.গ্রা.
৬)আয়রন ০.৬মি.গ্রা.
৭)ফসফরাস ৫০মি.গ্রা.
৮)শর্করা ৭.২%
৯)আয়রন ০.৬মি.গ্রা.
১০)আঁশ ০.৪%
১১)ভিটামিন-সি, অল্প ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ৮মি.গ্রা.
১২)সোডিয়াম ১ মি.গ্রা.
১৩) কোলেস্টেরল জিরো মিলিগ্রাম
১৪) পটাশিয়াম 358 মিলিগ্রাম
১৫) কার্বোহাইড্রেট 23 মিলিগ্রাম
১৬) খাদ্যতালিকাগত আঁশ ২.৬ গ্রাম
১৭)চিনি ১২ গ্রাম
১৮) প্রোটিন ১.১ গ্রাম
১৯)ভিটামিন সি ১৪% ক্যালসিয়াম
২০)আয়রন ১%
২১)ভিটামিন ডি ০%
২২)ভিটামিন বি৬ ২০%
২৩)কোবালামিন ০%
২৪)ম্যাগনেসিয়াম ৬%
২৫) ক্যালোরি ০%
কলার উপকারিতা নিয়ে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
১. পুষ্টিগুণে ভরপুর কলা –
কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক আমাদের বডির জন্য।
যেকোনো একটি মাঝারি সাইজের কলায় প্রায়১ ০৫ ক্যালরি, ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম ফাইবার, ১ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৪ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি থাকে।
এছাড়াও কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ যা শরীরের সঠিক কার্যক্ষমতা ও সঞ্চালনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
২. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক কলা –
কলা আমাদের দেহের হৃদ রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কারণ কলার মধ্যে রয়েছে ভরপুর পটাশিয়াম।
আমাদের বডির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পটাশিয়াম। কলার মধ্যে থাকা উচ্চমানের পটাশিয়াম আমাদের বডির রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
নিয়মিত বা প্রতিদিন কলা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেহের উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারি।
৩. হজমশক্তি উন্নত করে কলা –
কলার মধ্যে থাকে হাই ফাইবার। আর এই হাই ফাইবার পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
এবং যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৪. শক্তি জোগাতে সাহায্য করে কলা –
কলা হলো প্রাকৃতিক চিনি ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ ফল।
যা আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করতে পারে ।
তাই এটি ব্যায়াম করার আগে ও পরে একটি চমৎকার খাবার কলা ।
৫. মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কলা –
কলার মধ্যে ট্রিপটোফ্যান নামে একটি উপাদান থাকে, যেটা আমাদের মস্তিষ্কে ‘সেরোটোনিন’ নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দিয়ে থাকে।
যার ফলে মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে কলা ।
এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম আমাদের ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কলা –
কলার মধ্যে থাকা হাইফাইবার আমাদের পেট অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে ।
অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে।
ফলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া কলায় অনেক ক্যালরি ও কম তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৭. ত্বকের যত্নে কলা –
ত্বকের যত্নে কলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ কলার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি।
আর কলায় থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর।
তাই প্রতিদিন যদি কলার পেস্ট মুখে লাগানো যায় তাহলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল এবং ফর্সা।
৮. কিডনি সুস্থ রাখে কলা –
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কলা খাওয়ার ফলে কিডনির কার্যকারিতা উন্নত হয়।
এবং কিডনির বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি কমায়।
৯. রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারে কলা –
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।
কলার আয়রন আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে যাদের রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া আছে সেটা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
১০. স্মৃতিশক্তি বাড়ায় কলা –
কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ ও ম্যাগনেশিয়াম মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এবং মস্তিষ্ক বা ব্রেন ভালো রাখতে ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
১১. কলা মানসিক চাপ কমায় –
কলার ভিতরে থাকা ভিটামিন বি৬ ও পটাশিয়াম স্নায়ুর কার্যক্ষমতা উন্নত করে ।
এবং আমাদের মানসিক চাপ হ্রাস করে ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে সাহায্য করে ।
১২. চুলের যত্নে উপকারী কলা –
চুলের যত্নে কলা অনেক উপকারী। নিয়মিত কলার পেস্ট চুলে ব্যবহার করলে চুল হবে নরম, কোমল,মসৃণ ও উজ্জ্বল।
তাছারা ও কলা চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। এবং চুলের বৃদ্ধি ও ঘন হতে সহায়তা করে।
১৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক কলা –
কলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান থাকে।
যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে।
যা মানুষের ক্যান্সারের ও ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
১৪. হাড়ের গঠন মজবুত করে কলা –
কলায় থাকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম ।
যা আমাদের Muscle-হাড়কে শক্তিশালী করে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১৫.শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে কলা –
আমরা যদি প্রতিদিন একটি কলা খাই তাহলে শরীরের ভিটামিন বি৬-এর চাহিদার ৫% এবং ভিটামিন সি-এর প্রায় ১৫% পূরণ হয়ে যায়।
এতে আমাদের শরীরের ইনসুলিন, হিমোগ্লোবিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরিতে সহায়তা করে কলা।
১৬. কলা পেশী গঠনে সহায়ক –
অনেক সময় আমাদের শরীরের পাহাড়ের কিছু অংশে পেশিতে টান ধরে এবং খুব যন্ত্রণা হয়
। এই পেশির টান প্রতিরোধের সহায়ক পটাশিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট।
কলায় থাকা পটাশিয়াম ও কার্বোহাইড্রেট পেশী টান প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কলা ব্যায়ামের পরে খাওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত খাবার।
১৭. ডায়রিয়াতে উপকারী কলা –
কলায় থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ আমাদের হজমে সাহায্য করে।
আমাদের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কলা।
ডায়রিয়ার সময় রোগীকে কলা খাওয়ালে রোগীর শরীরের খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণ হয় ও ডায়রিয়া তারাতারি ভালো হয়ে যায়।
কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশী। ভোরে নাস্তা করার সময় সকালে কলা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
বিশেষ করে অন্য খাবারের সাথে কলা খাওয়া ভালো। খালি পেটে কলা খাওয়া এড়ানো উচিত।
দিনের যেকোনো সময় কলা খাওয়া গেলেও সকালের দিকে খেলে এটি বেশি উপকারে আসে।
পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা অসাধারন।
রাতে কলা খাওয়া কি ঠিক?
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আর রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেয়ে ঘুমালে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
কল হলো কার্বোহাইড্রেটের অনেক ভালো উৎস। তবে কলাতে প্রোচুর পরিমান প্রাকৃতিক শর্করা থাকে।
তার জন্য রতে কলা খেয়ে ঘুমালে ও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ওজন বারতে দেয় না।
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
তবে যাদের সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির প্রবলেম আছে, তাদের রাতের বেলা কলা না খাওয়াই ভালো।
কারণ কলা অনেকটা ঠান্ডা প্রকৃতির ফল এবং রাতে হজমে ঝামেলা হতে পারে।
দৈনিক কয়টি কলা খাওয়া উচিত?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রোজ 2 থেকে তিনটি কলা খেতে পারে। আর বাচ্চাদের জন্য একটি যথেষ্ট।
কলা খেলে কি ওজন বাড়ে? কলা খেলে কি ওজন বাড়ে?
তার মধ্যে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি আছে সে ক্ষেত্রে কলা খেলে ওজন বাড়তে পারে।
কলা খেলে কি পেটের চর্বি কমে?
জানি কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে থাকার কারণে কলা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
কিন্তু পরিমিত পরিমাণে কলা খেলে কখনোই ওজন বাড়ে না। দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
সতর্কতা :
কলা খুব পুষ্টিকর এবং উপকারী ফল, যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
কিন্তু কলা খাওয়ার ফলে যদি আপনাদের কোন শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কলা খাবেন।
আরও পরুন : তরমুজের উপকারিতা?……….……..…………..।
Leave a Reply