প্রাকৃতিক ভাবে সৌন্দর্যচর্চার সেরা উপকরণ হলো কলা।
কলা শুধু শক্তির বড় উৎসই নয় এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শরীরে কর্মশক্তি জোগায় এবং কলা সহজে নষ্ট হয় না,
ও দামটাও খুব কম একদম হাতের নাগালে ।
বিশেষ করে আমরা যারা ব্রেকফাস্ট বা সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাই বা খেতে চাই না, তাদের জন্য একটি কলা হতে পারে আদর্শ খাবার ও দ্রুত পুষ্টি পাওয়ার সহজ সমাধান।
কলা শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবেই নয়, কলা খাওয়ার স্বাস্থ্যগত উপকারিতার পাশাপাশি, কলা আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নেও দারুণভাবে কাজ করে।ত্বকের যত্নে কলার উপকারিতা অবিশ্বাস্য।
আজ জানাবো কীভাবে ত্বকের যত্নে আপনি ব্যবহার করতে পারেন কলাকে একেবারে ঘরোয়া উপায়ে, নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
ত্বকের যত্নে কলার কিছু জনপ্রিয় ব্যবহার :
কলা দিয়ে ঘরোয়া উপায় আমাদের ত্বকের অনেক ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
আমরা যারা কেমিক্যাল ফ্রিও প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকের যত্ন করতে চাই তাদের জন্য কলা একটি কার্যকারী সলিউশন।
কলা এসন একটি ফল যার মধ্যে , অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ,আর্দ্রতা, এবং ফটোকেমিক্যালস-সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে।
তাই কলা আমাদের শরীরের, ত্বক ও চুলের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। এজন্য কলাকে বলা হয় দামে কম মানে ভালো।
কলার দাম খুব কম ও সবসময় পাওয়া যায়। তাই খুব সহযে আমাদের ত্বক ও চুলের সহযে ব্যাবহার করতে পারি।
১) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কলা :
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও ত্বকে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কারণ কলার মধ্যে নানা ধরনের উপকারী উপাদান রয়েছে। যা আমাদের ত্বকতে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে সাহায্য করে।
কলার পেস্ট ও কলার ছোকলা আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী নিম্নে কলার ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
উপকরণ:
প্রথমে অর্ধেক বা আধা কলা নিতে হবে,
১ চা চামচ তরমুজের রস বা সশার রম বা কমলার রস নিতে হবে ও,
১ চা চামচ মধু বা ১ চা চামচ চিনি নিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
এরপর মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে আপনি আপনার মুখ এবং হাত পা ফেসওয়াশ বা সাবান দিয়ে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে নিবেন।
তরপর মিশ্রণটি আপনি আপনার মুখে গলায় হাতে পায়ে লাগান।
এরপর 15 থেকে 20 মিনিট মিশ্রণটি আপনি আপনার মুখে রাখো এবং শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রেজাল্ট বা ফলাফল :
আপনার ত্বক হয়ে উঠবে ২ গুন ফর্সা, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ।
২) মুখের কালো দাগ দূর করতে পারে কলা:
কলা মুখ সহ হাত-পায়ের যেকোনো ধরনের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
পাকা কলার ফেসপ্যাক শুধু আমাদের ত্বকের কালো দাগি দূর করে না ত্বকে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতেও সাহায্য করে।
উপকরণ :
প্রথমে ১টি পাকা কলা নিতে হবে,
তার সাথে ১ টেবিল চামচ মধু,
১ টেবিল চামচ লেবুর রস বা সশার রস নিতে হবে।
আপনি চাইলে দুটোই নিতে পারেন। তবে লেবুর রস ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটু সর্তকতা অবলম্বন করবেন।
কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে লেবুর রস সুট করে না।
যদি আপনি আপনার হাতের স্কিনে লাগিয়ে দেখবেন যদি লেবুর রস আপনারা স্কিনের সুট তাহলে লাগাবেন না হলে স্কিপ করবেন এবং শসার রস লাগাবেন।
সবগুলো উপাদান ভালো ভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
মিশ্রণটি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনার হাত পা ও মুখমন্ডল ফেসওয়াশ বা সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন।
তারপর ভালো করে মিশ্রণটি মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রেজাল্ট বা ফলাফল :
আমাদের ত্বকের দাগ হালকা হবার পাশাপাশি, আমাদের ত্বক ফর্সাও হবে ।
৩) কলা বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে:
কলা আমাদের ত্বকের বলে রেখা দূর করার পাশাপাশি চোখ কালো দাগ ও পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে।
উপকরণ :
প্রথমে একটা কলার হাফ বা অর্ধেকটা নিতে হবে,
পরে তার সাথে ১ চা চামচ টক দই,
কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা কমলা লেবুর রস বা সশার রস নিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
পরে প্যাকচট মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। তার পর শুকিয়ে যাওয়া অবধি ওয়েট করতে হবে।
শুকিয়েনগেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
রেজাল্ট বা ফলাফল :
এটি আমাদের ত্বক টানটান উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করবে।
৪) ব্রণ সারাতে সাহায্য করে কলা:
কলা ত্বকের ব্রণ সারাতে ও ব্রণের দাগ দুর করতে সাহায্য করে।
তাছারা ব্রণ যাবার পর যে বড় বড় কালো দাগ ও গর্ত হালকা করতে সাহায্য করে।
উপকরণ:
১টি পাকা কলা
, ১চা চামচ মধু বা চিনি,
আধা চা চামচ বেকিং সোডা,
আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো নিয়ে প্যাক বানিয়ে নিতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
ভালো ভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন ও মুখে লাগান।
তারপর ১০–১৫ মিনিট রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রেজাল্ট বা ফলাফল :
ব্রণ কমবে , ব্রণ যাবার পর যে বড় বড় যে কালো দাগ হয় ও গর্ত হালকা, নতুন ব্রণ হওয়া রোধ হবে।
৫) তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী কলা:
এর মধ্যে কি আছে যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাতো।
আর এই তৈলাক্ত কারণের জন্যই আমাদের মুখে বেশি পরিমাণে পিম্পল হয়ে থাকে।
গুড়ি দানা ও রেস হয়ে থাকে। তৈলাক্ত ত্বক থেকে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মুক্তি দিতে পারে কলা।
উপকরণ:
১ টি কলা, ১ চ চামচ মধু বা চিনি ও লেবুর রস বা সশার রস নিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
মুখে প্যাকটি লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর পনি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফলাফল:
এটি আমাদের মুখের অতিরিক্ত তেল কমিয়ে মুখ রাখবে সতেজ।
৬) নিস্তেজ ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে কলা :
অনেক সময় আমাদের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি তে সময় দিতে হয় বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে হয় রোদের মধ্যে যেতে হয় যাওয়ার কারণে আমাদের ত্বক অনেক বেশি ডাল হয়ে যায়।
তো বাসায় এসে ইনস্ট্যান্ট যদি একটা কলার ফেসপ্যাক লাগানো যায় আপনার ত্বক অনেক সজিব হয়ে উঠবে।
ইনস্ট্যান্ট গ্লো পেতে ত্বকে কলার ভূমিকা অপরিসীম।
উপকরণ:
পাকা কলা, সশার রস বা লেবুর রস, চন্দন গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে একটি ঘন পেজ বানিয়ে নিতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি :
মিশ্রণটি মুখে লাগান ও ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ফলাফল:
দেখবেন ১ বার ব্যাবহারের পর ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হয়ে যাবে যা আপনার ধারনার বাইরে ।
৭) ত্বকে আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে কলা:
যাদের স্কিনে ড্রাইনেস এর সমস্যা আছে এবং শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা আছে তাদের জন্য কলা অনেক উপকারী।
কারণ কলা ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এবং ত্বককে মশ্চারাইজ করে এবং সফট করতে সাহায্য করে।
উপকরণ:
শুধু চটকানো পাকা কলা ও সাথে খাটি মধু মিশিয়ে নিন।।
ব্যবহার:
এরপর হাত দিয়ে মাসাজ করে করে মুখে এপ্লাই করুন ,
এরপর মুখে ব্যক্তি 20 মিনিট রেখে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফলাফল:
রোজ ব্যাবহারের ফলে আপনার ত্বক হবে নরম ও মসৃণ।
৮) ব্রণের ঘরোয়া প্রতিকার হলো– কলার খোসা:
কলা যেমন উপকারী কলার খোসাটাও তেমন উপকারী।
কলার উপকারিতার কথা আমরা সবাই জানি কিন্তু কলার খোসা ও উপকারী।
কলার খোসা যদি আলতো হাতে আপনি ঘষে খসে এপ্লাই করেন মুখে ।
এবং কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলবেন দেখবেন আপনার স্ক্রিন অনেক গ্লো করছে।
ব্যবহার:
কলার খোসার ভিতরের অংশ আপনি আপনার মুখে ও ব্রণের ওপর ঘষে নিন।
ফলাফল:
কলার খোসা আমাদের স্ক্রিনের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ও ব্যাথা বা প্রদাহ কমায়।
সতর্কতা :
নিজেকে সুন্দর রাখার জন্য আমাদেরকে বাড়তি যত্ন নিতে হয় ত্বকের প্রতি।
রোজ রোজ পার্লারে গিয়ে পয়সা ঘনত্ব না করে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে কলার সাহায্যে আমাদের ফেসিয়াল করে নিতে পারি।
যদি কোন মানুষের ক্ষেত্রে কলা ব্যবহারের ফলে কোন প্রবলেম হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন।
নিজের যত্ন নিন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন এবং সুন্দর রাখার জন্য নিজের পরিচর্যা করুন।
Leave a Reply