গরমের সিজনে ও বৈশাখের তপ্ত রোদের কারনে বাইরে বেরোলেই তৃষ্ণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে।
এই অতিষ্ঠ গরমের সময় এক টুকরো ঠান্ডা তরমুজ বা তরমুজের সরবত যেন প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে।
তরমুজ শুধু গরমে তৃষ্ণা মেটাতে পারে এমনটা নয়, ত্বকের যত্নে, ত্বকের স্বাস্থ্যকে সুন্দর করতে, ত্বককে উজ্জ্বল ও ফর্সা করতে তরমুজের জুড়ি নেই।
ত্বকের যত্নে তরমুজের গুরুত্ব অপরিসীম (toker jotne tormuj)। প্রাচীনকাল থেকে ও মিসরেও রূপচর্চায় ব্যবহৃত হতো এই তরমুজ ফল।
তরমুজ দিয়ে ত্বকের যত্ন হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে।
কারন তরমুজে এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ত্বকের কোলাজেন বাড়ায়, আবার ভিটামিন এ, বি, সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বকের সব ধরনের শুষ্কতা ও বলিরেখা-দাগ কমাতে সাহায্য করে ।
ডা. শালীন ভারতী হলো ঢাকার আয়ুর্বেদা রিসার্চ অ্যান্ড হেলথ সেন্টার এর একজন বড় ডক্টর।
তিনি জানান, তরমুজের মধ্যে প্রায় ৯০%–এর বেশি পানি থেকে থাকে, যা মানুষের শরীর ও ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করতে পারে ও ত্বকের স্বাস্থ্যকে সুন্দর করতে পারে।
তাছাড়া আপনার স্কিনের যদি আরো ভালো উপকার চান তাহলে আপনি তরমুজের সাথে চালের গুড়া বা হলুদ গুঁড়া অথবা বেসন মিক্স করে একটি ভালো মানের স্ক্রাব বানিয়ে নিতে পারেন।
তাছাড়া তরমুজের বিচি ও আমাদের স্কিনের জন্য উপকারী অনেক।
এছাড়া আপনি তরমুজের বীজ ও গুড়া করে বাসায় বানানো যে কোনো ক্লিনজারের সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
ক্লিনজার হিসেবে তরমুজের ব্যবহার – Using watermelon as a cleanser:
প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে তরমুজ কিন্তু অত্যন্ত উপকারী। এক কথায় আপনি বলতে পারেন তরমুজ একটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার।
১. আপনার স্কিন যদি অতিরিক্ত সেনসিটিভ স্কিন হয়।
তাহলে শুধুমাত্র তরমুজের রস আপনি আপনার মুখে এপ্লাই করতে পারেন।
একটা টিস্যুর সাহায্যে আলতোভাবে ঘষে খসে এপ্লাই করুন।
তারপরে দেখতে পাবেন মুখের অবাঞ্চিত ময়লাগুলো সব উঠে আসছে।
এইভাবে 5 মিনিট খসে খসে এপ্লাই করুন আলতোভাবে।
তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন আপনার মুখ একদম ক্লিন হয়ে গেছে।
২. যাদের স্কিন ভালো এবং অতিরিক্ত সেনসিটিভ স্কিন নয়।
তারা তরমুজের রসের সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
যাদের মুখে লেবুর রস সুট খায় না তারা স্কিপ করবেন।
অতিরিক্ত তৈলাক্ত তাদের জন্য লেবুর রস উপকারী।
তরমুজের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে এইটা আপনার মুখকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেলতে পারে।
তৈলাক্ত ভাব মোটেই থাকবে না।
৩. যাদের স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই বা ড্রাই স্কিন আছে। তারা তরমুজের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিতে পারেন।
কারণ এই ক্লিনজারটি আপনার মুখকে ক্লিন করার সাথে সাথে আপনার মুখের মর্যাচারাইজারও ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
ক্লিনজারটি আরো শক্তিশালী করতে চাইলে আপনি এর মধ্যে কলা ও যোগ করতে পারেন।
তরমুজের মাস্ক, তরমুজ দিয়ে ফেসিয়াল বা তরমুজের ফেসপ্যাক আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এটি আমাদের ত্বকের ছোপ ছোপ দাগ পিগমেন্টেশন এবং নানা ধরনের ত্বকের সমস্যায় এলার্জি ব্রণ ইম্পেল এর মতন সমস্যা চুলকানোর সমস্যার সবকিছু দূর করে এবং ত্বকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
১. আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত একটি পূরণ ও সেনসিটিভ স্কিন হয়ে থাকে তাহলে তরমুজের রসের সাথে বা তরমুজ বেরেন করে তার সাথে হলুদ মিক্স করে নিবেন।
কারণ সেনসিটিভ স্কিনের জন্য হলুদ অত্যন্ত উপকারী।
তরমুজ হলুদ মিক্স করে একটা প্যাক বানিয়ে নিন তারপর সেটাকে 15 থেকে 20 মিনিটের জন্য মুখে দিন।
শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললাম দেখবেন আপনার স্কিন চকচক করছে।
২. যাদের ত্বক একটু তৈলাক্ত তাদের জন্য তরমুজের পেস্টের সাথে বেসন হলুদ ও শসার রস মিশিয়ে নিলে আরো বেশি ভালো হয়।
যদি আপনার ত্বকে লেবুর রস সুট করে তাহলে আপনি এই প্যাকটার সাথে লেবুর রও যোগ করতে পারেন এটা আরো বেশি কার্যকর।
তৈলাক্ত ভাব দূর হওয়ার সাথে সাথে ত্বকাবে উজ্জ্বল এবং ফর্সা হবে ও দাগ মুকতো হবে।
৩. যাদের স্কিন ড্রাই তারা তরমুজের পেস্টের সাথে ডিমের সাদা অংশ ও টক দই মিশিয়ে নিলে তাদের মুখের ড্রাইনেস টা কম হবে।
এবং ত্বক মশ্চারাইজার থাকবে। এটা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী ।
আপনি চাইলে ফেসপ্যাকের সাথে আপনি হলুদ ও মিশিয়ে নিতে পারেন ।
এটা আপনার জন্য আরো বেশি ভালো কাজ করবে।
ত্বকের বলি রাখা দূর করে ত্বকে উজ্জ্বল এবং ফর্সা করতে তরমুজ খুব ভালো কাজ করে।
তরমুজ দিয়ে ত্বকের যত্ন তো আমরা জানি কিন্তু তরমুজের বীজ দিয়েও যে ত্বকের যত্ন করা যায় সেটা কি আমরা জানি?
যাদের ত্বকে ব্রণের আছে এবং ব্রণের সমস্যা আছে এলার্জি আছে তাদের জন্য তরমুজের বীজ অত্যন্ত উপকারী।
প্রথমে তরমুজের বীজ আমাদের সংগ্রহ করে নিতে হবে।
এরপর তরমুজের বীজগুলোকে ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ করা দানাগুলো পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
পেস্ট আপনি সরাসরি আপনার মুখে লাগাতে পারেন এতে করে আপনার ব্রণ চলে যাবে।
চাইলে এর সাথে ডিমের ডিমের সাদা অংশ মিক্স করে লাগাতে পারেন। আরো বেশি কার্যকারী।
ফেসপ্যাকটি ব্রণের জন্য এবং তৈলাক্ত ত্বকের মানুষদের জন্য খুব বেশি উপকারী।
তরমুজ এর মতন তরমুজের খোসা ও আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
তরমুজের খোসাতেও তরমুজের মতন প্রচুর পরিমাণে উপকারী ভিটামিন রয়েছে। তরমুজের খোসার উপকারিতা অনেক।
আপনি চাইলে সরাসরি তরমুজের খোসা আপনি আপনার মুখে মেসেজ করতে পারেন।
তরমুজের খোসা দিয়ে রূপচর্চা করলে অনেক ত্বকের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
দেখবেন আপনার মুখের অনেক অবাঞ্চিত ময়লা দূর হয়ে গেছে। আপনার স্কিন অনেক ক্লিনেও ফর্সা দেখাবে।
তাছাড়াও আপনি তরমুজের খোসাকে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিয়ে সেদ্ধ করতে পারেন।
সিদ্ধ করা পানি ঠান্ডা করে আপনি একটা জারে রেখে দিতে পারেন।
টিস্যুর সাহায্যে এটি আপনার মুখে এপ্লাই করতে পারেন টোনার হিসেবে।
তরমুজের খোশাসিত পানিকে প্রাকৃতিক টোনার বলা হয়।
এটি আপনার ত্বককে গভীরভাবে ক্লিন করবে। এই টোনারটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী।
তরমুজের রস চোখের নিচের কালো দাগ ও বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যার কারণে তরমুজ আমাদের বডিকে হাইড্রেটেড করতে পারে।
এবং তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ ও সি প্রচুর পরিমাণে থাকে।
আর তরমুজে থাকা ভিটামিন সি ও এ আমাদের ত্বককে হাইড্রেটেড তো রাখি এবং ত্বকে উজ্জ্বল সুন্দর করতেও সাহায্য করে।
মুখের কালো দাগ ও ডার্ক স্পট চোখের নিচের কালো দাগ সবকিছু দূর করতে পারে।
১. আপনি চাইলে সরাসরি তরমুজের রস চোখের চারপাশে লাগিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট রেখে দিতে পারেন।
রস শুকিয়ে গেলে আপনি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
এইভাবে 10 থেকে 15 দিন লাগালে আপনি দেখবেন আপনার চোখের ডাক স্পটগুলো রিমুভ হয়ে গেছে।
২. তাছাড়া আপনি তরমুজের রসের সাথে হলুদের গুঁড়ো ও শসার রস যদি মিক্স করে নেন তাহলে এটা আরো ভালো কাজ করবে।
ত্বকের যত্নের পাশাপাশি তরমুজের রস আমাদের চুলের জন্য উপকারী।
তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় এটি আমাদের চুলের গ্রোথ বাড়াতে সাহায্য করে।
তরমুজের রস আমাদের মাথার ত্বকের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে তোলে এর ফলে আমাদের চুল ঘন ও মজবুত হয়।
এবং তরমুজের রস আমাদের মাথার ত্বকের স্ক্যাল্প পরিষ্কার করতেও সহায়তা করে। যার ফলে আমাদের চুল উজ্জ্বল ও সাইন করে।
হ্যাঁ তরমুজের পেস্ট প্রতিদিনই আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
তরমুজের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পানি যা আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী।
তাই আমাদের ত্বকে প্রতিদিনই তরমুজ এবং তরমুজের রস ব্যবহার করা যাবে।
আমাদের ত্বকের জন্য কোন তরমুজ ভালো এমন প্রশ্ন আমাদের মনে রয়েছে।
তবে গালিয়া তরমুজ আমাদের ত্বকের জন্য বেশি ভালো।
কারণ গালিয়া তরমুজে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।আর ভিটামিন এ কে সৌন্দর্যের ভিটামিন বলা হয়।
তরমুজ অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফলের মধ্যে লাইকোপেন এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা আমাদের ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ফর্সা ও টানটান করে।
সতর্কতা:
তরমুজ আমাদের ত্বকের এবং চুলের জন্য ও আমাদের বডির জন্য অনেক উপকারী।
তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সবকিছু শুট করে না।
তরমুজ বাজার রস আপনার বডিতে সুট না করে তাহলে আপনি এভোয়েড করুন। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করুন।
আরও পরুন: তরমুজের উপকারীতা ……………..……………….।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকায় আলুর ভূমিকা অপরিসীম। আলুর কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে…
আলু একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর সবজি। আলুর উপকারিতা - alur upokarita , অসাধারণ গুনুগুন,…
লেবুর চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি, সহজ ও শক্তিশালী পানীয়। টি সাধারণ পানীয় হলেও…
সকালটা শুরু হয় এক কাপ গরম গরম চা দিয়ে। সকালে উঠে এক কাপ চা না…
আমরা অনেকেই ঠান্ডা বা গরম ও সকাল কিংবা সন্ধ্যায় যাই হোক না কেন এক কাপ…
বর্তমান সময়ে দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনিয়মিত জীবনযাপন, বাহিরে বের হলে করা রোদ, ধুলো-বালির ফলে…